ARTICLE BY: প্রমা ভট্টাচার্য ১২/৭/২১
রবীন্দ্রনাথের জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, কবির কল্পনার জগত শুধু রোম্যান্টিক ভাবনায় আপ্লুত নয়, প্রকৃতি বা ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন নয়। যদিও তাঁর সব গঠনমূলক কাজ তাঁর কল্পনাপ্রবণ মনের ই সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নদর্শী মন, তাঁর জ্ঞান, কর্ম,কল্পনা তাঁর ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণতা দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের জ্ঞান ও রসের সাধনার সংগে সংগে কর্মীসত্ত্বার প্রকাশও দেখা যায় তাঁর সারা জীবন জুড়ে।গ্রামোন্নয়ন, কৃষির ঔৎকর্ষ, সমবায় সমিতি, শ্রীনিকেতনে বিদ্যালয় নির্মাণের মধ্যে কবির কর্মীসত্ত্বা পূর্ণতা পেয়েছে।
সময়ের সংগে সংগে কবির চিন্তা ও কর্মজগতের বিশালতা এবং ব্যবহারিক মূল্য প্রতিদিন নতুন করে আমরা উপলব্ধি করছি। ভারতের শিক্ষিত নেতারা যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিলেন রবীন্দ্রনাথ তখন গ্রামের মানুষকে স্বনির্ভর করার কাজে মগ্ন। সাধারণ মানুষকে মাতৃভাষার মূল্য,আত্মশক্তির গুরুত্ব, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা তাঁর কাছে দেশ সেবার ই অংগ ছিল।সাহিত্যসেবার সংগে সংগে সারাজীবন সমাজসংস্কারকের ভূমিকাপালনেও তিনি থেমে থাকেন নি।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার যে ধারা এনেছিলেন তাতে প্রথাগত শিক্ষার সংগে সংগীত, শিল্প, অভিনয়, খেলাধুলা ইত্যাদি নিয়ে ছাত্রের সামগ্রিক বিকাশের চিন্তা ছিল। শান্তিনিকেতন থেকে দু মাইল দূরে সুরুলেও একটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা হয়েছিল। শ্রীনিকেতন নামে এই প্রতিষ্ঠানটি Institute of Rural Reconstruction নামেও পরিচিত। এখানে নিম্নলিখিত বিভাগগুলি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল।
১। ডেয়ারি এবং পোলট্রি …. শ্রী পি.সি. লাল, Offg. Director of Agriculture, Bengal Govt.
২। কৃষি ও পশুপালন……. শ্রী সন্তোষ বোস
৩। বয়নশিল্প……. শ্রী মণি সেন
৪। চর্মশিল্প…… শ্রী শচীমোহন ভৌমিক
৫। উদ্যান বিভাগ…..শ্রী কে. কাশাহারা (Japanese)
৬। দারুশিল্প!……… ঐ
৭। গ্রামোন্নয়ন…………..শ্রী কালীমোহন ঘোষ, ডক্টর. আর. মুখার্জী
৮। অনাথ আশ্রম………. শ্রী সন্তোষ মজুমদার।
শ্রী এল.কে. এলমহার্স্ট এখানকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
.পাঠভবনের মাধ্যমিক ছাত্ররা ইচ্ছে করলে সুরুলের টেকনিক্যাল বিভাগে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দিতে পারত। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিষয় পশুপালন, ডেয়ারি, পোল্ট্রি ইত্যাদি। এছাড়া ও আঞ্চলিক আধুনিক পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করা, চর্মশিল্প বয়নশিল্প ইত্যাদি কুটীরশিল্পের উন্নতির এবং কর্মচারীদের গ্রামের পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য, আর্থিক উন্নতির শিক্ষা এবং গ্রাম সংগঠনের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া এখানকার নিয়মিত কার্যক্রম ছিল। নিকটবর্তী গ্রামের যুবকদের নিয়ে একটি সংঘ তৈরি হয়েছিল যাদের এই পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হত। ১৯২৫ সালে ২৩ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল যেখানে প্রায় ৬০০ যুবক প্রশিক্ষণ পেত।
বিশ্বভারতী সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ইংরেজ সরকারের গোয়েন্দা দপ্তর যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল তার ওপর ভিত্তি করে ১৯৩৪ সালে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছিল। সেখান থেকেই এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশের মানুষকে আত্মনির্ভরতায় শিক্ষিত করে তোলা রবীন্দ্রনাথের কাছে দেশ সেবারই অংগ ছিল, শ্রীনিকেতনের Institute of Rural Reconstruction তার ই প্রতিফলন।